কিভাবে পদার্থবিজ্ঞান এর বিভিন্ন মৌলিক একক সম্পর্কে বাস্তব ধারনা পাওয়া যায় তার প্রথম পর্ব প্রকাশের পর পাঠকদের কাছ থেকে পজেটিভ সাড়া পেয়েছি। বিশেষ করে যারা একটু অন্যভাবে চিন্তা করতে পছন্দ করেন তাদের বেশ ভালো লেগেছে বলেই জানিয়েছেন। ধন্যবাদ সবাইকে আমার সাথে থাকার জন্য। আজকের পর্বটি তাদেরকে উৎসর্গ করছি, যারা সবকিছুকে একটু অন্যভাবে চিন্তা করতে পছন্দ করেন। “They are the real believers who see things not the way they are, but the way they could be.”
আপনি যদি আজই প্রথম এই লেখাটি খুঁজে পেয়ে থাকেন তবে অনুরোধ করবো নিচের লিংক থেকে আগের পর্ব পড়ে দেখার জন্য।
কিভাবে ইনফো এ লিখুন লেখক হয়ে সবাইকে কিছু তথ্য জানান
লেখালেখি করে আপনি জিততে পারেন আকর্ষনীয় পুরষ্কার! বিস্তারিত দেখুন
কিভাবে পদার্থবিজ্ঞান এর বিভিন্ন মৌলিক একক সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নিবেন? পর্বঃ ১
পদার্থবিজ্ঞান এর বিভিন্ন এককঃ বলের একক নিউটন
আচ্ছা আজ সবার প্রথমে লিখতে ইচ্ছা করছে নিউটন নিয়ে। কারণ নিউটন আমার একজন খুব প্রিয় একজন বিজ্ঞানি। তবে তাঁকে নিয়ে কিছু লিখব না। লিখব বলের একক নিউটন নিয়ে। আমার বইয়ে লিখা আছে কোনও ১ 1kg ভরের বস্তুকে যে পরিমাণ বল প্রয়োগ করলে তা 1মিটার/সেকেন্ড^২ ত্বরণ লাভ করে, তাকে 1নিউটন বলে। সুন্দর মনোরোম একটি সংজ্ঞা। জ্ঞানমূলকে 1 দিতে পরীক্ষক বাধ্য। তবে আমি জানি কি আমি কি লিখেছি? এটা একাটা কঠিন বাস্তবতা যে আমরা আজ বলের সংজ্ঞা জানলেও এক নিউটন কতটুক বল তার সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। আচ্ছা এক নিউটন কতটুকু বল তার সম্পর্কে আমাদের ধারণা দিতে পারে 100 গ্রাম রাঁধুনি গুঁড়ো মশলার একটি প্যাকেট। হ্যাঁ ভুল বলছি না,, একটি 100 গ্রাম ভরের মশলার প্যাকেটকে পৃথিবী একটা বল দিয়ে টানছে। এটা আমরা যানি। কারণ না টানলে তো মশলার প্যাকেট আকাশের পানে ছুটিয়া গেলেও আমরা কিচ্ছুটি বলিতে পারিতাম না!! তাই প্যাকেটকে যে পৃথিবী যে বলে টানছে তা হলো প্যাকেটটির ওজন। আমরা জানি, ওজন, w=mg (খুব ভালো লাগত যদি w=mg কেন হলো বলতে পারতাম তবে আজকে হাতে সময় বিশেষ নেই।তবে এতটুকু বলতে পারি, F=ma. ওজনও একটি বল আর এ বল প্রয়োগের ফলে যে ত্বরণ সৃষ্টি হয় তা হলো g. সব মিলিয়ে “w=mg”) আচ্ছা তাহলে 100 গ্রাম রাঁধুনি গুঁড়ো মশলার ওজন কত? w=.1kg×9.8ms^-2=.98 N এটা এক নিউটনের প্রায় কাছাকাছি। তুমি যদি সমান এক নিউটন পেতে চাও আরো কয়েক গুড়া মরিচ দিতে পারো। আচ্ছা তাহলে তুমি 100 গ্রাম রাঁধুনি গুঁড়ো মশলার প্যাকেট হাতে নিলে নিচের দিকে যে ওজন অনুভব করবে তা মোটামুটি এক নিউটনের সমান। তাহলে বুঝতেই পারছ এক নিউটন অবশ্যই খুব বেশি বল না। পর্ব ১ এ আমার বন্ধু আমাকে যে নির্ঘাত ঘুষি দিয়েছিল তা অবশ্যই এক নিউটন থেকে অনেক বেশি ছিল।
পদার্থবিজ্ঞান এর বিভিন্ন এককঃ কাজের একক জুল
নিউটনের পরই বলব জুলের কথা। জুল হলো কাজের একক। পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে লেখা আছে কোন বস্তুকে 1 নিউটন বল প্রয়োগ করলে এটি যদি বলের অভিমুখে 1 মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে তাহলে 1 জুল কাজ হয়। চমকপ্রদ সংজ্ঞা! আচ্ছা আমরা জানি 100 গ্রাম রাঁধুনি গুঁড়ো মশলার প্যাকেটের ওজন প্রায় 1নিউটন। ও, গত পর্বে বলতে ভুলে গেছি আমার Height 1.62 মিটার। তাই আমার কোমরের কিছুটা উপর পর্যন্ত এক মিটার হয়। আচ্ছা তাহলে আমি যদি 100 গ্রাম মশলার প্যাকেটটা আমার কোমরের কিছুটা উপর থেকে ছেড়ে দেই তাহলে পৃথিবী প্রায় এক জুল কাজ করে ফেললো। আচ্ছা বুঝিয়ে দিচ্ছি, পৃথিবী যেহেতু 1 নিউটন বল দিয়ে প্যাকেটটাকে টানে, তাই যদি এক মিটার উপর থেকে প্যাকেটটাকে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে এটি বলের দিকে এক মিটার পথ অতিক্রম করবে। তাই কাজ হবে এক জুল। আ আচ্ছা এটা ঠিক অনুভব করা গেলো না তাই তো? তাহলে এক কাজ করা যাক, মশলার প্যাকেটটা মাটিতেই থাক। এবার আমি প্যাকেটটাকে কোমরের এক্টু উপরে তুলতেই আমি যে বিশাল কাজটা করেছি তা প্রায় এক জুলের সমান। কারণ অভিকর্ষ বল একটা সংরক্ষণশীল বল। তাই তুমি ফেলে দেয়ায় যতটুক কাজ করতে হয়েছে তুলতে গেলেও সমান কাজ হবে।
দেখেছ, পৃথিবীকে দিয়ে তুমি যতটুকু কাজ করিয়েছ, পৃথিবীও তোমাকে দিয়ে ঠিক ততটুকু কাজ করিয়ে নিল। এবার একটু চিন্তা করব একজন মজুর বা কুলির কথা, একজন আমার সমান উচ্চতার(1.62 মিটার) মজুর যখন 50 কেজি ভরের একটা বস্তা মাথায় তুলেন তখন তিনি প্রায় 743.8 জুল কাজ করেন। যা প্রায় 189 ক্যালরির সমান। আশা করি পরেরবার তাদের ২০টাকার যায়গায় ৩০ টাকা দিতে কষ্ট হবে না।
পদার্থবিজ্ঞান এর বিভিন্ন এককঃ আয়তন এবং ক্ষেত্রফল
আচ্ছা এবার একটু ক্ষেত্রফল আর আয়তন বুঝার পালা। আমাদের দেশের আয়তন কত?? জানি ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার, তাই তো?? কিন্তু আমরা সাধারণ জ্ঞাণ বইয়ে ভুল শিখেছি। না, না, পরিমাণটা ঠিকই আছে শুধু আয়তনের জায়গায় হবে ক্ষেত্রফল। আচ্ছা ক্ষেত্রফল আর আয়তন কি আমরা কি জানি?? এটা জানার আগে আমরা জানব মাত্রা বা Dimension নিয়ে। এটা আমি মনে রাখে খুব সুন্দর একটা উদাহরণ দিয়ে। এবার তোমাকে একসাথে মনে করতে হবে আবার হাতও চালাতে হবে। মানে প্রথমে তোমাকে একটা খাতার পাতা নিয়ে সেখানে একটা কলম দিয়ে ছোট্ট একটা বিন্দু আঁকতে হবে। এবার কল্পনা করতে হবে একটা “মরিবার তরে” পিপীলিকা সেথায় আছে। যেহেতু পিপীলিকার পাখনা গজায় মরিবার তরে, তাই সে উড়তে পারে। তবে সে তোমার কলমের কালির বাহিরে যেতে পারবে না। আচ্ছা বলতো এই ছোট্ট জায়গাটাতে সে কি কোনো দিকে যেতে পারবে? অবশ্যই না। এটাকে আমি বলি মাত্রাহীন। তারপর তুমি উপর আর নিচে বাদে যেকোনো দিকে তোমার কলমটা চালিয়ে একটা সোজা দাগ দাও। এবার পিপীলিকাটি সেই রেখা দিয়ে সোজা যেতে পারবে। কিন্তু সে ডানে বামে যেতে পারবে না। এটাকে আমি বলি একমাত্রিক। এবার তোমার কল্পনার জগতে হারিয়ে যেতে হবে। মনে করো তোমার রেখাটার উপর খুব গাঢ় রং আছে, তুমি হাত দিয়ে তাকে দিলে লেপ্টে, তাহলে তোমার খাতায় যে সুন্দর শিল্পকর্মটা হবে তার মধ্যে দিয়ে পিপীলিকাটি বামে ডানে হাঁটতে পারবে, কিন্তু উড়তে পারবে না, এটা তাই দ্বিমাত্রিক। এবার যদি তুমি এই দ্বিমাত্রিক এলাকাটি দুই কোণায় ধরে উপরের দিকে টান দিয়ে তুলে ফেল তাহলে একটা বাক্সের মতো জায়গা হয়ে যাবে। এখানে সেই পিপীলিকা মনের সুখে উড়তে পারবে ডানে বামে যে দিক খুশি যেতে পারবে। এটা হলো ত্রিমাত্রিক একটা ক্ষেত্র।
এতক্ষণ আমি যা বলতে চেয়েছি তার মানে এই যে বিন্দু মাত্রাহীন, রেখা একমাত্রিক, তল দ্বিমাত্রিক আর Solid বা ঘনবস্তু ত্রিমাত্রিক। আচ্ছা বিন্দু যেহেতু মাত্রাহীন তাই এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ কিচ্ছু নেই। তারপর তুমি যেই রেখাটি খাতায় একেঁছ, তার শুধু দৈর্ঘ্য আছে। তারপর সেই শিল্পকর্মটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ আছে কিন্তু উচ্চতা আছে কি? অবশ্যই নেই। এই শিল্পকর্ম তোমার খাতার যেই জায়গাটা নষ্ট করেছে সেটা হলো ওই শিল্পকর্মের ক্ষেত্রফল। আর সব শেষে তুমি মনে মনে যেই বাক্সের মতো জিনিসটা তৈরি করলে সেটা যে জায়গাটা দখল করে তাই হলো তার আয়তন। আশা করি আমরা ক্ষেত্রফল আর আয়তন একটু একটু বুঝি।
এবার আমার টপিকে আসি, 1মিটার^2 কতটুক। তাই আমি যদি একটা বর্গাকার জায়গা তৈরি করি যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ 1 মিটার তাহলে সেটি যে জায়গা নিবে তাকেই ১1 মিটার^2 ক্ষেত্রফল বলব। এবার সেই বর্গটাকে উপরের দিকে টেনে ১মিটার তুলে ফেললে সেটি যেই জায়গাটা দখল করবে তাকে ১মিটার^৩ আয়তন বলব।
পদার্থবিজ্ঞান এর বিভিন্ন এককঃ চাপের একক প্যাস্কেল
আচ্ছা এবার বলব প্যাস্কেলের কথা। তাঁর নাম আমরা পড়েছি গণিতের দ্বিপদ বিস্তৃতিতে। মনে আছে প্যাস্কেলের ত্রিভুজের কথা? প্যাস্কেল সম্ভাবনা নিয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন।তবে ফিজিক্সে প্যাস্কেল হলো চাপের একক। আমরা যেমন পড়ার চাপ, কাজের চাপ বলি তেমনি বস্তু জগতেও চাপ আছে। সংজ্ঞা দিতে চাইলে, একক ক্ষেত্রফলে কোনো বস্তু যে পরিমাণ বল প্রয়োগ করে তাকে 1 প্যাস্কেল বলে। আচ্ছা আমরা তাহলে আবার মশলার প্যাকেটে যাই। কিন্তু এবার এটা ছিড়তে হবে। প্রথমেই এরকম একটা জায়গা দরকার যার দৈর্ঘ্য আর প্রস্থ 1 মিটার করে। তাহলে জায়গাটার ক্ষেত্রিফল হলো 1 মিটার^2। এবার গুরো মশলার প্যাকেট খুলে সুন্দর করে সুষমভাবে মশলাটা পুরো জায়গাটাতে ছিটিয়ে দাও। মশালার গুড়া নিচের দিকে যে বিশাল পরিমাণ চাপ প্রয়োগ করছে তাই 1 প্যাস্কেকের সমান চাপ।বুঝতেই পারছ এটা খুব কম চাপ। সাধারণ সময়ে বায়ুমন্ডলই আমাদের উপর 1,01,325প্যাস্কেল চাপ প্রয়োগ করে!
পদার্থবিজ্ঞান এর বিভিন্ন এককঃ ঘনত্ব এর একক kg/m^3
এবার বলব ঘণত্বের একক kg/m^3 এর ব্যাপারে৷ তবে তার আগে একটা Quota বলি। বলা হয় “Imagination is better than reality ” এটা অনেক সত্যি কারণ বাস্তবে আমরা এমন অনেক কিছুই করতে পারি না যা কল্পনায় করতে পারি। এই যেমন এখন আমি একটা বাক্সে বানাবো যার দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতা সব ১মিটার। কেও বাস্তবে বানাতে পারলে খুবই ভালো, তবে আমি কল্পনাতেই তৈরি করলাম। এবার এটাতে যদি এক kg বালি সুন্দরভাবে সুষমভবে উড়িয়ে দেই তাহলে বাক্সে বালির ঘনত্ব হবে 1kg/m^3. আচ্ছা বাতাসের ঘনত্ব হলো 1.29 kg/m^3, তার মানে সেই বাক্সটাকে যদি আমি বাতাস দিয়ে পূর্ণ করি, তাহলে সেখানে যতটা আণু পরমাণু থাকবে তাদের মোট ভর হবে 1.29 kg. পানির ঘনত্ব যেহেতু 100kg/m^3 তাই বাক্সটাকে যদি পানি দিয়ে পুর্ণ করি তাহলে বাক্সটার ভর হবে 1000 kg. এবার যদি স্বর্ণ দিয়ে পূর্ণ করি তাহলে ভর হবে 19300kg. ইস, যদি বাস্তবে এমনটা করতে পারতাম!
এরই সাথে শেষ হইল আমার একক পরিচিতি। ধন্যবাদ চমক ভাইয়াকে আমার মতো অনেককে এমন অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য। আমি আর একটু বলব আমার চোখে ভালোবাসাকে নিয়ে। আসলে আমরা যখন কোনকিছুকে ভালোবাসি তখন অবশ্যই তার কোনো কারণ থাকে। যখন আমাদের কোন মানুষকে ভালো লাগে হয়তো তাকে ভালোলাগে তার সৌন্দর্যের কারণে বা মেধার কারণে। কারণ ছাড়া ভালোবাসা আসলেই অর্থহীন। যখন আমাকে কেউ জিজ্ঞাস করে ফিজিক্স ভালো লাগে কেন? আমি বলি ফিজিক্স আছে আমার আংগুলে, মশলার প্যাকেটে, আমার উপলব্ধিতে এক কথায় সবখানে।এক কথায় No Physics =No Charm। আমি ফিজিক্স ভালোবাসি আর এই ভালোবাসাই আমায় দিয়েছে বেঁচে থাকার সার্থকতা, বেঁচে থাকার আশা।
মন্তব্যসমূহ