লজ্জা পাওয়া মানুষের আদিমতম স্বভাব। একেক মানুষ একেক অবস্থায় একেক ভাবে লজ্জা পায়। লজ্জা পেতে অনেকেরই তেমন কোন বড় কারন লাগে না। শিশুরা বেশিরভাগই বহিরাগত মেহমানদের কাছে আসতে লজ্জা পায়। আবার অনেক বড় বড় ব্যক্তিও নানান কাজে লজ্জা পান। লজ্জা পাওয়া কোন কোন ক্ষেত্রে খুবই দরকারী কিন্তু অনেক কাজে লজ্জা পেলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। লজ্জা স্বভাব থেকে মুক্ত হতে হলে জানতে হবে উপায়সমূহ।
লজ্জা স্বভাব এবং এর ধরন সমূহ
লজ্জা পাওয়া এক ধরনের রোগ। একে মনোরোগ চিকিৎসকেরা দুইভাগে ভাগ করে থাকেন। মাইল্ড এবং এক্সট্রিম। অনেক মানুষই স্বাভাবিক কথা বার্তায় কিংবা কাজে কিছুটা কম স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এসকল মানুষের লজ্জা স্বভাব কাটিয়ে তোলা যায়।
কিভাবে ইনফো এ লিখুন লেখক হয়ে সবাইকে কিছু তথ্য জানান
লেখালেখি করে আপনি জিততে পারেন আকর্ষনীয় পুরষ্কার! বিস্তারিত দেখুন
অন্যদিকে কিছু মানুষ সবসময়ই সোশ্যাল কাজ কর্ম থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। তাঁরা অন্যান্যদের সাথে মিশতে কিংবা চালচলনে এক ধরনের মানসিক বাধা পান। বিষন্নতায় ভোগেন এবং ক্ষীপ্ত বা খিটখিটে মেজাজের হয়ে থাকেন। তাঁরা চিকিৎসকদের মতে এক্সট্রিম রোগে ভুগছেন। এরকম অবস্থায় প্রচন্ড রকমের হতাশা কাবু করতে পারে।
তবে আমাদের আশেপাশে অনেক মানুষই আছেন যাঁরা অল্প কিছু লজ্জা স্বভাব নিয়ে কিছুটা বিব্রত। এই যেমন কথা বলতে চাচ্ছেন অনেক মানুষের উপস্থিতির জন্য লজ্জা পাচ্ছেন, তিনি থেমে যাচ্ছেন। আবার খুব স্বাভাবিক কাজেও লোকজনের উপস্থিতিতে খুব লজ্জা পাচ্ছেন। স্কুলে পরা পারলেও সবার সামনে বলতে অসুবিধা হয় যাদের, অফিসের সব কাজ করেও নিজেকে উপস্থাপন করতে যার লজ্জা লাগে। এমন হলে তা থেকে বের হয়ে আসা খুবই জরুরী।
কিছু কিছু লজ্জা আমাদের পাওয়াই উচিৎ। যেমন চুরি করার পর লজ্জা, অপরাধ করে ফেলার পর কিংবা কোন মিথ্যা বলার পরে। এমন অনেক ক্ষেত্রেই লজ্জা পান না যারা তারা আবার মানুষের মধ্যেই পড়েন না। এসব সময়ে লজ্জা পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। এর জন্য নিজের ভুল কিংবা অপরাধ শিকার করে নিজেকে শুধরিয়ে নেয়াই ভাল। লজ্জাহীন আচরন না করে নিজের ভেতরে মানবিকতার পরিচয় দেয়া যায়।
চলুন দেখি কিভাবে লজ্জা স্বভাব থেকে মুক্ত হওয়া যায়?
লজ্জা স্বভাবের কারন এবং এর প্রতিকার
গবেষকদের মতে ১৫% শিশু জন্মানোর সময়ই কিছুটা লজ্জা স্বভাব নিয়ে জন্মায়। কিন্তু এর চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে এসব শিশু সঠিক পরিবেশ পেলে তার এই স্বভাবের উন্নতি হয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে বাবা মা কিংবা আত্মীয়স্বজন এবং সামগ্রিক পরিবেশ এই স্বভাবের জন্য দ্বায়ী হয়। বাবা মায়ের স্বভাব এ যদি ন্যুনতম লজ্জা ভাব থাকে তবে তা শিশুদের ক্ষেত্রেও সম্ভাবনার হয়। এছাড়াও স্বাভাবিক কার্যকলাপে কিংবা নিত্যদিনের নানান কাজে এমন কিছু অজ্ঞতা বশেও এই স্বভাবের উদয় ঘটতে পারে। উগ্রতা কিংবা নানান ধরনের অতিরঞ্জিত যত্ন নেওয়া থেকেও এমন লজ্জা স্বভাব দেখা দেয়। অনেক বেশি সচেতন কিংবা শাসন থেকেও এমন লজ্জা স্বভাবের সৃষ্টি হতে পারে।
স্কুল পাড়া প্রতিবেশি কিংবা নিজেদের জানাশোনা মানুষদের কার্যকলাপে কিংবা সামাজিক ধর্মীয় আচার আচরণেও এমন লজ্জা স্বভাব দেখা দেয়।
বড়দের ক্ষেত্রে কর্মস্থান অফিস কিংবা আশেপাশের কঠোর পরিচালনার জন্য ভীতি এবং লজ্জা স্বভাব দেখা দিতে পারে।
প্রতিকার কিংবা বের হয়ে আসার উপায়
এসব থেকে প্রতিকারের জন্য নানান ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। শুরুতেই নির্ধারন করতে হবে কোন ধরনের লজ্জা স্বভাব কিংবা কোন অবস্থানে থেকে এর সাথে লড়ছেন। যদি এমন হয় যে খুবই অল্প আধটু লজ্জা আপনাকে ঘায়েল করছে তবে তার থেকে ধীরে ধীরে বের হবার প্ল্যান করে সে অনুযায়ী অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে।
কিন্তু যদি এমন হয় যে লজ্জা আপনার খুবই ভয়াবহ আকারের হয়ে দাঁড়িয়েছে তবে একজন ভাল চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে লজ্জা পাওয়া চলবে না।
সব সময় শিশুরা একা খেলাধুলা করলেই লাজুক হয় ব্যপারটা এমন নয়। অনেক ক্ষেত্রেই খেয়াল রাখা উচিৎ যেসব শিশুদের বন্ধু বাড়ানোর প্রবনতা কম তাদেরকে নির্বাচন করে সময় মত যত্ম নেয়া এবং সহযোগীতা করতে হবে। কখনো কখনো অবহেলা অযত্ম থেকেও লজ্জা স্বভাবের শুরু হতে পারে।
কোন স্বাভাবিক কাজেও লজ্জা পাচ্ছে দেখলে সহযোগীতা করাই হবে উত্তম কাজ। তিরস্কার করা মোটেও ঠিক নয়। তিরস্কার করলে আরো বেশি লজ্জা পেতে থাকে। বন্ধুদের মধ্যে যদি কেউ এমন স্বভাবের হয় যে কাজে অকাজে তিরস্কার করে, তাকে এড়িয়ে চলাই ভালো।
কিছু বাস্তব চিত্র
তবে এই আধুনীক সময়েও যদি আমরা দেখি, অনেক মানুষই স্বল্প ভুষনে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন আবার অনেকেই পুরো ঢেকে রেখেও স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন না। অনেকেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করার সময় কাউকে বিবেচনায় আনছেন না। আবার অনেকেই আছেন দুইজনের সামনে গিয়ে একটু জোরে কথা বলতে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন।
অতিরিক্ত লজ্জাহীন মানুষের দেখা যেমন মিলছে অতিরিক্ত লজ্জাযুক্ত মানুষেরও দেখা মেলে।
লজ্জা পেয়ে লাভ কী যদি আপনার কাজ না হয়? অনেক কবি সাহিত্যিক লজ্জা নিয়ে কথা বলেছেন। অসফল হলেও যেন লজ্জা না পাই তার জন্য ইংগিত করেছেন। আমরা হয়ত পড়েছি, দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ! ভালো ব্যক্তিত্বের জন্য লজ্জা স্বভাবের নিয়ন্ত্রন হচ্ছে খুবই জরুরী।
মন্তব্যসমূহ