আমাদের গতানুগতিক ফিসিক্স পড়ার সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো যেকোন সূত্র মুখস্ত করার প্রবণতা। আসলে এই তথাকথিত সূত্রগুলোকে বলা উচিত তত্ত্ব। যেমন- আর্কিমিডিসের প্লবতা সম্পর্কিত তত্ত্বটি। আমার ধারণা এসব তত্ত্বগুলোর পেছনের ঘটনা ও প্রমাণের গাণিতিক বিশ্লেষণ জানার মধ্যেই লুকিয়ে আছে ফিজিক্সের আসল মজা। আমার আজকের লেখাটিতে আর্কিমিডিসের সূত্র নিয়ে লিখছি।যা থেকে কিভাবে পদার্থবিজ্ঞনের বিভিন্ন সূত্র পড়বে তার একটা ধারনা পেতে পার। পরবর্তীতে আশা করি আন্যান্য সূত্র বা তত্ত্ব নিয়ে আরও লিখতে পারব।
যদি বলা হয় বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত দৌড় কোনটি? তাহলে যেকোনো বিজ্ঞানপ্রিয় মানুষই বলবেন আর্কিমিডিসের ইউরেকা ইউরেকা বলে দেয়া সেই দৌড়ের কথা। তখন তিনি কি অবস্থায় ছিলেন বা আদোও মুকুটটি সোনার ছিলো কিনা তা আমাদের আলোচনার বিষয় নয়। ফেসবুকে বা গুগল সার্চে একটু ঘাটাঘাটি করলেই এ বিষয়ে অনেক গল্প পাওয়া যাবে। ওসব অন্যদিন বলা যাবে।
কিভাবে ইনফো এ লিখুন লেখক হয়ে সবাইকে কিছু তথ্য জানান
লেখালেখি করে আপনি জিততে পারেন আকর্ষনীয় পুরষ্কার! বিস্তারিত দেখুন
আচ্ছা, আর্কিমিডিস মুকুটে ব্যবহৃত সোনার বিশুদ্ধতা নির্ণয়ে যে বিষয় দুটি ব্যবহার করেছিলেন তা হলো —
১। পানিতে নির্দিষ্ট আয়তনের কোনো বস্তুকে ডুবানো হলে, এটি তার সমান আয়তনের পানিকে অপসারণ করবে।
২। নির্দিষ্ট আয়তনের রূপা সমান আয়তনের সোনা থেকে হালকা হয়।
১ নম্বার পয়েন্ট সহজ, সোজা ভাষায় কমন সেন্স। শুধু পানিতে নয় যেকোনো প্রবাহী বস্তুতে কোনো বস্তু ডুবালে সেটি তার সমান প্রবাহীকে অপসারণ করবে।এখনে প্রবাহী হলো যেকোনো তরল বা বায়বীয় পদার্থ। যেমন বাতাস, পানি। তাহলে চিন্তা করে দেখ, এই যে তুমি বসে আছ, এখনো তুমি তোমার আয়তনের সমান বাতাসকে অপসারণ করছ।
তবে ২য় টিতে বোঝার অনেক কিছু আছে। সোনার ঘনত্ব আমরা সবাই জানি 19300kg/m^3 আর রূপার ঘনত্ব 10500kg/m^3। মানে 1m^3 সোনার ভর 19300kg। আর 1m^3 রূপার ভর 10500kg। আশা করি বুঝতেই পারছ, যেকোনো আয়তনের সোনা অবশ্যই সমান আয়তনের রূপার থেকে ভারী।
আচ্ছা আর্কিমিডিস আংকেল কিভাবে এটা ব্যবহার করলেন মুকুটের সোনার বিশুদ্ধতা, কিভাবে???
আসলে খুব সহজ একটা প্রক্রিয়ায়। রাজা হিরো আর্কিমিডিসকে বলেছিলেন দেবতার জন্য তৈরি করা মুকুটটিকে কোনো ভাবে না ভেঙে এর সোনার বিশুদ্ধতা নির্ণয় করতে। আংকেল করলেন কি প্রথমে মুকুটটাকে পানিতে ডুবালেন আর মুকুট দ্ধারা অপসারিত পানির পরিমাণ মেপে রাখলেন। আবার ঠিক সেই মুকুটের সমান ভরের খাঁটি সোনা পানিতে ডুবালেন। আবার এবারের পানির পরিমাণও মেপে রাখলেন।
এবার তোমরাই বল, পরের ধাপটা কি।
তখনকার দিনে সোনার সাথে খাদ হিসেবে রুপা ব্যবহার করা হতো। তাই যদি সোনার সাথে খাদ হিসেবে রূপা ব্যবহার করা হলে তা ঐ পদ্ধতিতে বের করা হয়, তাহলে অবশ্যই তার ঘনত্ব সোনার চেয়ে কম হবে। তাহলে খুব সহজেই বলা যায়, খাদসহ সোনার মুকুটের আয়তন সমান ভরের সোনার চেয়ে বেশি হবে। তাই আংকেল সহজেই বলে দিতে পারলেন মুকুটে খাদ আছে কিনা। এটাই আর্কিমিডিসের সূত্রের পেছনের গল্প। পরের অংশটা আসলে এর ব্যবহারিক প্রয়োগমাত্র। এটাই আমাদের বইপুস্তকে খুব ফলাও করে লেখা হয়। সেটা সবাই জানে আমি আর বললাম না।