গ্রামে গঞ্জে শিশু আর শহুরে শিশু এক নয়।গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা নিতে শুরু করেন প্রায় ছয় বছর বয়সে। আবার শহুরে শিশুদের দেখা যায় মাত্র দুই থেকে আড়াই বছর বয়স হলেই স্কুলে যাওয়া আসা শুরু করে। দুই দিকেই বিপদের ধারা। একটা হচ্ছে দেরিতে পড়া শুরু করা অন্যটা অল্প বয়সে চাপাচাপি পড়ানোর অভ্যাস। কোনটাই ভাল নয়। শিশুর পড়ালেখা শুরু করা দরকার সঠিক সময়ে, সঠিক উপায়ে। দৈনিক শিক্ষা ব্যবস্থা হতে পারে কিছুটা সহায়ক।
কিভাবে শিশুকে শেখানো যায় ? শিশুর পড়ালেখা শুরু করা বিষয়ে জানুন-
শিশুর ভাষা শেখাঃ সাধারন কিছু নীয়ম অনুযায়ী বাচ্চাদের ভাষা শিখতে সময় লাগে প্রায় দুই বছর। এটা হচ্ছে বলতে পারা শেখা। যদি বাবা মা দু’জন দুই ভাষায় কথা বলেন তখন আরো কিছু বেশি সময় লাগে। কারন শিশুর কনফিউশন কাজ করে। কে সঠিক বলছে বুঝতে দেরি হয়। তবু মায়ের সাথে কথা বলতে শুরু করে এক দিন। অনেক সময় আঞ্চলিক ভাষা আর চলিত ভাষার মেশানো প্রভাবও শিশুকে প্রভাবিত করে। ভাষা বলতে শুরু করার পাশাপাশি আচরনও বদলায়। শিশুর মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস জমে ওঠে।
কিভাবে ইনফো এ লিখুন লেখক হয়ে সবাইকে কিছু তথ্য জানান
লেখালেখি করে আপনি জিততে পারেন আকর্ষনীয় পুরষ্কার! বিস্তারিত দেখুন
ইংরেজি ভাষা শিক্ষা শুরু করা হলে শিশুর জন্য কিছুটা অসুবিধা হয়। এ ক্ষেত্রে শিশু নিজে খুব ভাল করে খেয়াল করে আশেপাশের সবাই সত্যিই কোন ভাষায় কথা বলছে। সবাই ইংরেজি বললে, শিশুর ইংরেজি বলা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। তাই যে ভাষাতেই কথা শেখান তা যেন যথাযথ প্রয়োগ থাকে চারপাশে। পরিবেশকে সেভাবে সেটাপ করুন। বাংলাদেশে অবস্থান করে ইংরেজি শিক্ষার সহজ উপায় অনুশীলন করা যেতে পারে।
বাংলা বর্নমালা শিক্ষাঃ বাংলা বর্নমালা শিক্ষা ভাষা শিক্ষার একটু উপরের ধাপ। তবু শুরু করা যেতে পারে। বাংলা বর্নমালা শেখানোর জন্য খাতা কলম নিতে পারেন। নিজে লিখে শিশুকে লেখার দিকে আগ্রহী করে তুলতে পারেন। এছাড়াও বাংলা বর্নমালা সমৃদ্ধ ইবুক পাবেন যা কম্পিউটারে দেখিয়ে শিশুর মনোযোগ আকর্ষন করতে পারেন। অনেকেই আজকাল বিভিন্ন গেমস দিয়ে রাখেন শিশুদের হাতে হাতে। সেসব গেমস থেকে শিশু কী শেখে তা বলতে পারব না। তবে ভাল কিছু যে শেখে না তা নিশ্চিত। এক্ষেত্রে বর্নমালা সহ ইবই কিছুটা কাজে দিতে পারে। শিশুর পড়ালেখা শুরু করা তখন অনেক মজার হয়ে উঠবে।
বই সম্পর্কে ধারনা দেয়াঃ শিশু কথা বলতে পারার সাথে সাথে তাকে বই সম্পর্কে ধারনা দেয়া উচিৎ। বই কী কেন কিংবা কিভাবে বই থেকে সাহায্য নেয়া যায়। আপনি নিজে যদি কারনে অকারনে শিশুর সামনে বই খোলেন, কিংবা কোন কিছু জানার ভান করেন বা শিশুকে বুঝালেন যে বই পড়ে সব জানা যায়। তবেই শিশুরা বইয়ের দিকে ঝুঁকে যাবে। তারা আগ্রহী হয়ে উঠবে। বই পড়ার জন্য আপনিও কিছুটা অভ্যাস করুন। বই পড়া অভ্যাসটা অনেক বেশি কার্যকরী অভ্যাস। শিশুর আচরন বদলে দিতে পারে, আদর্শ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠতে পারে অল্প বয়স থেকেই।
শিশুদের জন্য কম্পিউটার শিক্ষাঃ আজকাল কম্পিউটার সবার হাতে হাতেই আছে। না থাকলেও স্মার্ট ফোন আছে সবার কাছে। তাই শিশুকে অন্ততঃ প্রাথমিক কম্পিউটার শেখানো যেতে পারে। কীবোর্ড, মাউস, স্ক্রীন, ডিভাইস, নানা তথ্য একে একে শিশুকে দেখানো যেতে পারে। শিশুর আগ্রহ থাকে কার্টুন, এনিমেশন কিংবা নানা ধরনের চালচিত্রে। সেসব না দেখিয়ে গঠনমূলক কিছু দেখানো যেতে পারে। কিভাবে কার্টুন আঁকা যায় কিংবা কম্পিউটার অন করা অফ করা। ছোটখাট কাজ দেখানো যেতে পারে।
শতর্কতাঃ কখনোই শিশুকে গেম বা কার্টুন এ নিয়মিত ছেড়ে দিবেন না। এতে করে তার মধ্যে থাকা সকল সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে।
শিশুকে ভিন্নধর্মী শিক্ষায় যুক্ত করতে পারেন, শিশুর পড়ালেখায় বুদ্ধি বিকাশ ঘটে
ছবি তোলা শেখা, ফটোগ্রাফিঃ ফটোগ্রাফিতে শিশুদের আগ্রহ থাকে অনেক বেশি। কিছুটা হলেও তাদের কে সুবিধা দেয়া যেতে পারে। কে জানে হয়ত কোন একদিন ভাল ফটোগ্রাফার হয়ে উঠবে।
ম্যাজিক শেখাঃ ম্যাজিকে শিশুর আগ্রহ প্রচুর পরিমানে। তাদের বুদ্ধি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ছোটখাট ম্যাজিক কাজে দেয়।
বিজ্ঞান শেখানোঃ বিজ্ঞান বাক্স নামে আজকাল অনেক বৈজ্ঞানিক প্রমানের টুলস পাওয়া যায়। যেগুলো শিশুদের বিনোদন দেয়ার সাথে সাথে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বাড়ায়।
কৌতুক শেখাঃ ছোটখাট কৌতুক শিখিয়ে দিলে শিশুরা মজাও পায় আবার অন্যদের সাথে প্রয়োগ করে বুদ্ধির চর্চা করতে পারে। তাই বাংলা কৌতুক
আবৃতি শেখাঃ শিশুদের আবৃতি শেখানো অনেক ভাল একটি পদক্ষেপ হতে পারে।
এছাড়াও সুন্দর কথা বলা, ছবি আঁকা, সংগীত শেখা, নৃত্য শেখা শিশুকে গড়ে তুলতে অনেক সাহায্য করে।
সব শেষে শিশুর পড়ালেখা শুরু করা হলে কিংবা যত্ন নিলে যা লাভ-
একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা কিংবা নিত্য নতুন সৃজনশীল শিক্ষায় শিশু শিক্ষা কিংবা প্রাথমিক শিক্ষাকে অনেক সহজ করে দেয়। আমরা আমাদের শিক্ষাকে আরো বেশি কার্যকরী করে দিতে নিজেরাও অবদান রাখতে পারি। সে কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিশুদের শিক্ষায় এগিয়ে আসা উচিৎ।
বাংলাদেশে শিক্ষার হার বর্তমানে অনেক এগিয়েছে। এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে স্বাক্ষরতার হার বাড়ছে। কিন্তু আমাদের দেশের বড় চ্যালেঞ্জ রয়েই গেছে। সুশিক্ষার হার বাড়ানো। এই সুশিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য এগিয়ে আসার সময় শিশু শিক্ষা অনেক বেশি পরিমানে প্রয়োগ করা দরকার।
মন্তব্যসমূহ