আজকের খবর, লালমনির হাটে এক কৃষক ঘুষের বিরুদ্ধে জনতাকে একত্রিত করার জন্যে মাইকিং করছেন, কারন তিনি ভুমি অফিসের খাজনা দিতে গিয়ে একচুল পরিমান কাজও শেষ করতে পারেন নি ঘুষের দাবি না পুরনের কারনে।

৬৫ বছর বয়সী রাজ মোহাম্মদ নামে ওই কৃষক মাইকে বলেন, ‘সবাই এখন ঘুষখোর। কেউ রাখে না কৃষকের খবর। সবাই আসুন ঘুষখোর অফিসারদের অফিসে তালা লাগাই।’

কিভাবে ইনফো এ লিখুন লেখক হয়ে সবাইকে কিছু তথ্য জানান

লেখালেখি করে আপনি জিততে পারেন আকর্ষনীয় পুরষ্কার! বিস্তারিত দেখুন

প্রতি উত্তরে অভিযোগ অস্বীকার করে মহিষখোচা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা জোবায়দুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘কৃষক রাজ মোহাম্মদ অফিসে এসেছিল ঠিকই তবে তার কাছে কোনো ঘুষ দাবি করা হয় নি।’ এই পুরো খবরটি আজ মাত্র বাংলামেইল অনলাইনে পড়লাম।

ঘুষের ব্যাপারে জানেন না এমন মানুষের কথা চিন্তা করতে পারবেন? ঘুষ খেয়ে সাস্তি পেয়েছেন এমন লোকের সংখ্যাই কম কিসে? আসুন এবার আসি কিভাবে ঘুষের প্রচলন শুরু হয় আর কিভাবেই বা একে সমাজ থেকে দূরে ঠেলে দেয়া যায় সে বিষয়ে কিছু ধারনা নেই।

ধারনা করা যেতে পারে যখন মানুষের মাঝে ব্যবসা সংক্রান্ত আইডিয়া এসেছিল তার কিছু সময়ের মধ্যেই এই ঘুষের মত ব্যপারটিও চলে আসে। একটা সময় ছিল রাজা বাদসারা উপঢৌকুন পাঠিয়ে মন জয় করার চেষ্টা করতো। চাহিদাকে বাস্তবে রুপ দেয়ার জন্য অন্যায়ভাবে চেষ্টা করার প্রথম এবং সবচে’ সহজ পদ্ধতির নাম ঘুষ অথবা ইংরেজীতে ব্রাইবেরী(Bribery)। কিভাবে ঘুষের প্রচলন হয়েছে তার সুপ্রাচীন ইতিহাস নেই বললেই চলে। তবে বানিজ্যিকিকরনের ফলে যে এর উতপত্তি তা অনেকেই স্বীকার করবেন।

বর্তমান সমাজে এর বিস্তৃতি কতটা তা বুঝিয়ে না বললেও চলে। একটু চোখ মেলে তাকালে দেখা যায় স্কুলে ডোনেশন, হাসপাতালে বখশিস/এক্সট্রা, সরকারী ব্যাঙ্কে কমিশন, বেসরকারী ব্যাঙ্কে সেলামী, পুলিশের নাস্তার টাকা, সরকারী আমলার পান বিড়ির টাকা এসব দিয়েই আমাদের সামাজিক জীবন দিব্যি শান্তিতে কাটিয়ে দিচ্ছি। এর মধ্যে সরকারি চাকুরী আগে কিছু টাকা ঘুষ দিলেই হয়ে যেত, এখন আর সেই সুযোগ নেই। কারন ঐ কিছু টাকার চেয়ে বেশি টাকা দেয়ার মত লোকের অভাব নেই, তাই মন্ত্রী টাইপের কেউ না বললে ঘুষ দিয়েও হচ্ছে না পিয়ন অথবা আয়ার চাকুরীটাও।

কিভাবে ঘুষের প্রচলন এত পরিমানে বাড়ল তা নিয়ে একটু চিন্তা করে দেখি, কি বলেন? এর জন্যে আমি পাটি গনিতের ঐকিক নীয়মের সাহায্য নিচ্ছি। বিরক্ত হয়ে যাবেন না যেন।

মনে করি আজ থেকে দশ বছর আগে বাংলাদেশে সরকারী চাকুরীর জন্যে পঞ্চাশ জন চাকুরী প্রার্থী একটি পদে আবেদন করেছিলেন। সেখানে লিখিত পরীক্ষায় প্রতি পদে দশজন করে পাশ করেছিলেন। লিখিত পরীক্ষার পর শারিরীক পরীক্ষায় পাচজন করে প্রতি পদে টিকে থাকলেন। এবার হবে মৌখিক পরীক্ষা। এখন একেকজনের জন্য থাকছে চারজন করে প্রতিদ্বন্ধী। এটার জন্য কেউই কেউই ঘুষ দিতে চাইলেন না কিন্তু একজন বুদ্ধিকরে প্রস্তাব দিলেন, কর্তৃপক্ষ রাজি হয়ে গেলেন, কারন কর্তৃপক্ষের কাছে এটা কঠিন একটা লোভনীয় ব্যাপার ছিল।

তার পরের বছর সেই কর্তৃপক্ষ কিছু বুদ্ধি বেশি খাটাবেন তো অবশ্যই। তিনি কায়দা কানুন করে এবার সহজ প্রশ্ন করলেন। লিখিত পরীক্ষায় এবার প্রতি পদে পঞ্চাশ জনেরো বেশি চান্স পেলেন। এবং প্রচার ভাল করায় এবার কর্তৃপক্ষের ব্যবসাটাও ভাল চলল।

এভাবে দশ বছরের চেষ্টায় এই লাইন যেহেতু সহজ এবং ঝামেলা মুক্ত, তাই হাসি খুশি নিয়ে আরো অনেকেই স্বেচ্চায় অনিচ্চায় এই সারিতে ভীড়ে গেলেন। ফলাফল হয়েছে বাংলাদেশে এখন কোথাও আর মেধার কিংবা লিগ্যাল কিছু আর নেই, যদি সেরকম কিছুর সন্ধান মিলে তবে সেখানে সমান সংখ্যক ভিড় তৈরী হবে এবং একই মন্ত্র পড়ে কর্তৃপক্ষ আরামে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।

সত্যি কথা বলতে কি, গ্রাহক নিজেই গ্রাহক সেবা পাওয়ার জন্য চাকরদেরকে ঘুষ দিয়ে মাথায় তুলেছেন। এখন আর নামাতে পারছেন না, কারন চাকর নিজেই এখন মনে করে মনিব। দশা সেই চলছে। তা না হলে দেখুন ভুমি অফিসে সরকারে খাজনা জমা দিতে গিয়ে তার কাছে দাবি করা হয় ঘুষ। ভাবতে কেমন লাগে, যে ঘুষ না দিলে সরকারি খাজনা জমা হবে না? আবার ওদের চাকুরীও যাবে না।

অন্যদিকে প্রাইভেট কোম্পানীতে যদি পাওনা আদায় না হয় তবে সেই অফিসারের চাকুরী ডিসমিস হয়। এখানেই ভাবনার বিষয়। কিভাবে এর শুরু আর বিস্তৃতি। ঘুষ এখন আর ঘুষ নয় প্রাপ্তিতে রুপ নিয়েছে।

 

কিভাবে ঘুষের প্রচলন বন্ধ করা যায়?
চালু হয়ে যাওয়া কোন কিছুই অল্প কথায় বন্ধ হয়ে যায় না। লালমনিরহাটের ঘটনায় জানা দেখা গেল অভিযোগের পালটা উত্তর প্রস্তুত থাকে। এসব অভিযোগ খুব বেশি আমলে নেয় না কেউই। কিন্তু উপায়? সাহসী না হলে এসব কাজে কোন পরিবর্তন হবে না। সরকারি কাজ সরকারি অফিসার করছে না এমন দেখলেই সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমেই সাধারন নিয়মে কাজের প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে। তারপর না শুনলে মোবাইলের ভিডিও অপশন ব্যবহার করা যেতে পারে। তার পরেও কাজ না হলে সেটা নিয়ে উর্দ্ধতন অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। যদি সন্তোষজনক কিছু না মেলে তবে যৌথ আন্দোলনে যেতে হবে। প্রথমেই সাংবাদিকদের সাথে শেয়ার করা যেতে পারে, এটা একাও করা যায়। সব প্রমান নিয়ে প্রেসক্লাবে গেলে বর্তমানের সংবাদ কর্মীরা অনেকেই খবর নোট করেন। সেখানেও ঘুষ খোর আছে তা কিন্তু মনে রাখতে হবে।

ঘুষখোরদের সামাজিকভাবে বঞ্চিত করতে হবে। কোনভাবেই তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করা যাবে না।

এক টাকা ঘুষ নিলেও তা সবার মাঝে জানিয়ে দিতে হবে। ভিডিও শেয়ার করে সারাদেশে তাকে খারাপ হিসেবে আখ্যা দিতে হবে। শারিরিক কোন শাস্তি না দিয়ে মানষীকভাবে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

প্রয়োজনে লালমনির হাটের ওই কৃষকের মত মাইকিং করে প্রতিবাদ করতে হবে। তবেই এই ব্যাধি দূর হবে এই সমাজ থেকে।

আরো জানার জন্যে বাংলাদেশের ঘুষ দেয়া নেয়ার যে আইন প্রচলিত আছে তা দেখতে পারেন।

http://bdlaws.minlaw.gov.bd/pdf/217___.pdf

 

এরকম আরো তথ্য যুক্ত করতে আমাদের সাথে যোগ দিন

জনপ্রিয় হচ্ছে

নিবন্ধন

লগিন করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আমাদের সম্পর্কে

কিভাবে ইনফো - Kivabe Info

কিভাবে ডট ইনফো একটি বাংলা তথ্য শেয়ারিং সাইট। এএখানে আপনি নিজে যেমন জানতে পারবেন তেমনি চাইলে সবাইকে জানাতেও পারবেন।

সোশ্যাল মিডিয়া

যোগাযোগের জন্য

© কিভাবে ইনফো - Kivabe Info 2013-2022

Developed by: Behostweb.com

আপনি আমাদের সাথে একমত হয়ে এই ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন, এর মানে আপনি আমাদের কুঁকি পলিসি গ্রহন করেছেন। পড়ুন প্রাইভেসি পলিসি . সব কুঁকি মেনে নিন