সাম্প্রতিক খবরে হয়ত আপনি অনেক বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। আপনি হয়ত এও ভাবছেন তাহলে কি ইন্টারনেটের এত সব সুবিধায় নিরাপদ অনলাইন ব্যাংকিং সম্ভব নয়? ম্যানুয়াল ব্যাংকিং খুঁজতে বের হয়ে গেছেন হয়ত। কিন্তু ব্যাপারটা আসলেই এমন নয়। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেমন অনেক দুর্ঘটনায় পড়ি, ক্রাইমের শিকারে পরিনত হই, হাইজ্যাকার চিনতাইকারীদের দ্বারা বিব্রত কিংবা সর্বস্ব হারাই ইন্টারনেটেও তেমনি অবস্থা। মোদ্দাকথা হলো আপনি যেখানেই যাবেন সেখানেই শিকারীরা প্রস্তুত। আপনাকে শিকারে পরিনত করতে তারা ঠিক গলা পানি অথবা পঁচা পানিতেও নেমে যায়। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরি নিয়ে অনলাইন ব্যাংকিং বন্ধ করে দেবার কোন কারন নেই। এটা বড় মাপের পুকুর চুরী জাতীয় কিছু একটা যার সাথে অনেক শক্তিশালী চক্র জড়িত। তদন্তে আশাকরি বেরিয়ে আসবে।
কিন্তু আপনার সামান্য পরিমান অর্থ কিভাবে নিরাপদ অনলাইন ব্যাংকিং করবেন তা জেনে নেওয়া অনেক বেশি জরুরী। প্রথমেই দেখুন বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধার চিত্র। ফান্ড ট্রান্সফার সুবিধা এখন সব ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং এই দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মোবাইল বিল অথবা টাকা লোডের সুবিধাও থাকছে। থাকছে অন্যান্য আরো বেশ কিছু সুবিধা যেমন ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম জমা, টিউশন ফি জমা, ইন্টারনেট বিল যেমন ওয়াইম্যাক্স প্রোভাইডার বিল পরিশোধ। এসবের মধ্যে অনেক ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং ই খুব ভাল আর ইউজার ফ্রেন্ডলি। যেমন চাইলেই অর্থ স্থানান্তর কিংবা কোন গ্রাহক যোগ করা যায় না। যেমন সিটি ব্যাংক। এদের নতুন কোন একাউন্টে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বেনিফিশিয়ারী যুক্ত করার ক্ষেত্রে আপনার গোপন পার্সোনাল কিছু নাম্বার দিতে হয়। এইচএসবিসি ও একই রকম। এরকম অনেক ব্যাংকের সিস্টেমেই এখন খুব সিকিউর ব্যাবস্থা আছে।
কিভাবে ইনফো এ লিখুন লেখক হয়ে সবাইকে কিছু তথ্য জানান
লেখালেখি করে আপনি জিততে পারেন আকর্ষনীয় পুরষ্কার! বিস্তারিত দেখুন
নিরাপদ অনলাইন ব্যাংকিং এর বাইরের কিছু খারাপ উদাহরন
কিন্তু খারাপ মডিউলও আছে। একটা উদাহরন দেই। আমি টেলিটক প্রিপেইড নাম্বারে ১৫০০টাকা লোডের রিকোয়েষ্ট দিয়েছিলাম ডাচ বাংলা ব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। সাথে সাথে আমার একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয় আর মোবাইলে কোন টাকাই আসে নি। যোগাযোগ করে আমি ব্রাঞ্চে একটি লিখিত আবেদন করেছিলাম পর্যন্ত। তাতেও কোন ভাল উত্তর পাইনি। আমার ভুল ছিলো(প্রিপেইড নাম্বারে দেয়া) কিন্তু তাদের সিস্টেম কেন সেটা ট্রেস করতে পারল না, কেন টাকা কেটে নিয়ে গেল, আর কেনই বা সিস্টেম এলাউ করলো যেটা সাধারনত পোষ্টপেইড নাম্বারের জন্যই মডিউল করা ছিলো? এসবের ভাল কোন ব্যাখ্যা আমি পাই নি। এবং সাধারন ক্ষমা চাওয়াটাও পাইনি। এটা বাংলাদেশ, তাই ১৫০০টাকার জন্য সিস্টেমের বিরুদ্ধে কোন মামলা করিনি। তবে ব্যাংক বয়কট করেছি। তাদের সাথে লেনদেন করিনা।
এজন্যই বললাম, বাংলাদেশে কিছু ব্যাংক আছে যারা এখনো অনলাইনের যোগ্যতা রাখে না। গ্রাহকের ভুলের জন্য হারিয়ে যেতে পারে আরো অনেক বড় এমাউন্টও। তবু যেটুকু আছে তা নিয়ে আপনি কিভাবে নিরাপদ অনলাইন ব্যাংকিং করবেন তার দিকে নজর দেয়া যাক।
কিভাবে নিরাপদ অনলাইন ব্যাংকিং করবেন
ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা ব্যাবস্থাঃ
ইন্টারনেট সংযোগঃআপনি যে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাবহার করেন তার গেটওয়ে কোথা থেকে আসছে, কিংবা আপনি কি ধরনের সংযোগ ব্যাবহার করেন তার উপরে নির্ভর করে ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা বা সিকিউরিটি।সংযোগ নেয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানী হওয়া উচিত। সবচেয়ে ভাল হয় যদি কোন ভাল ভিপিএন ব্যবহার করা যায়। কারন পাবলিক নেটওয়ার্কে হ্যাকার আর হাইজ্যাকার ঘুরে ফিরে ঘাপটি মেরে থাকে। কিন্তু ভিপিএন খুবই সিকিউরড হয়। ডাটাবেইজের বাইরে তথ্য খুব একটা যেতে পারে না। অনেকেই জানবে না আপনি ঠিক কি করছেন।পাবলিক বা অপরিচিত ওয়াইফাই কানেকশন যে কোন গোপনীয়তার জন্যই বিপদজনক। আপনার ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড, কুকিজ যে কোন সময়ে হ্যাকারের হাতে চলে যেতে পারে।
হ্যাকিং সম্পর্কে সাধারন জ্ঞানঃকিভাবে হ্যাকিং হয় সে ব্যাপারে অন্তত সাধারন ধারনা রাখা উচিত ।হ্যাকার সম্পর্কে বিস্তারিত আইডিয়া না থাকলে হ্যাকিং প্রতিরোধ করা মুশকিল। হ্যাকার আপনার ক্ষতি করতেই চায়, তবে সব হ্যাকার চোর নয়।সাধারনত ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার চোর বাটপার হয়। মনে রাখবেন হ্যাকার এতটাই সুপারম্যান নয় যে যা ইচ্ছে তাই করে ফেলবে। আপনার সহায়তা ছাড়া হ্যাকার কোনভাবেই আপনার ক্ষতি করতে পারবে না। হ্যাকাররা বিভিন্ন প্রলোভনে আপনার কাছ থেকে আপনার তথ্য চুরি করে। এর পরে অর্থও চুরি করতে পারে।ইমেইল ফিশিং, অ্যাডওন কিংবা ছোটখাট এপস অথবা ল্যান্ডিং পেইজ দিয়েই হ্যাকারেরা হ্যাকিং করে। তাই সফটওয়্যার ইনস্টলে সতর্ক থাকা জরুরী।
ডিভাইস ব্যাবহারঃ আপনি খুব সিকিউরড না হলে কোন ডিভাইস ব্যাবহার না করাই ভাল। অন্যের কম্পিউটার মোবাইলে নিজের ব্যাংক একাউন্ট চেক করা, লগিন করে লগ আউট করতে ভুলে যাওয়া।এসব কারনে একাউন্ট ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা আছে।নিরাপদ অনলাইন ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে এসব পরিহার করা উচিত।
লাইসেন্স সহ এন্টিভাইরাস ব্যাবহারঃ এন্টিভাইরাস ব্যাবহারে অনেকটা নিরাপদ হতে পারে আপনার অনলাইন ব্যাংকিং। মেলওয়্যার কিংবা অন্যান্য হ্যাকিং টুলস নিরুপনের জন্য এসব এন্টিভাইরাস সাহায্য করতে পারে।
ওয়েবসাইট ভেরিফাইড কি নাঃ যে ব্যাংকের অনলাইন সেবা নিচ্ছেন সেটির ওয়েব এড্রেস ভেরিফাইড আছে কিনা তা যাচাই করে দেখুন। ভেরিফাইড সাইটের লিংক ব্রাউজ করার সময় সেটা চিত্রের মত দেখাবে, ব্যাংকের নামেই ভেরিফাই হয়ে থাকে। ইউ আর এল যদি সঠিক না মনে হয় তবে আপনার কোন তথ্য প্রবেশ করাবেন না।সাধারনত সিকিউরড কানেকশন https:// দিয়ে হয়। আর অন্যান্য সাধারন গুলো http:// হয়।
ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাঃ নিয়মিত স্টেটমেন্ট দেখা, কাগজ পত্র সঠিক স্থানে রাখা, অথবা নিজের নখ দর্পনে ব্যাংকের হিসাব রাখা জরুরী। টাকা পয়সার কোন হেরফের দেখা গেলে সাথে সাথে ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। মোবাইলে এখন ট্রানজাংকশন এলার্ট নেয়া যায়। এটি আপনাকে জানিয়ে দিতে পারে কোন চুরি হচ্ছে কি না। ব্যাংক একাউন্টের ডাটা প্রতিদিনই দেখা উচিত।
কারো সাথে ব্যাংকের তথ্য শেয়ার না করাঃ আপনি কারো সাথেই ব্যাংকের তথ্য শেয়ার করতে পারেন না। ব্যাংকের কেউই আপনার কাছে এরকম তথ্য চাইবে না। পাসওয়ার্ড, কিংবা সিকিউরিটি প্রশ্ন, এসব। অতি আপনজনের কাছেও এসব তথ্য দেয়া উচিত নয়।
এছাড়াও নিরাপদ অনলাইন ব্যাংকিং এর জন্য আপনার কার্ড, চেক, স্টেটমেন্ট, এসব অত্যন্ত গোপনীয় স্থানে রাখা উচিত। শুধুমাত্র কার্ড স্ক্যামিং এর মাধ্যমেও আপনার টাকা লোপাট করে দিতে পারে।
মন্তব্যসমূহ