আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহন করার পর অনেকেরই বোধগম্য হয় যে তিনি ভাল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি। এজন্য সময়ের সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত নিতে পারাটা একটা দক্ষতার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তাই আসুন আজ দেখি কিভাবে সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এটি মূলত ভালভাবে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহনের প্রক্রিয়া।
ছোট একটি ঘটনা দেখা যাক।
কিভাবে ইনফো এ লিখুন লেখক হয়ে সবাইকে কিছু তথ্য জানান
লেখালেখি করে আপনি জিততে পারেন আকর্ষনীয় পুরষ্কার! বিস্তারিত দেখুন
সকালে ঘুম থেকে উঠলেন ফোনের শব্দ শুনে। কেউ একজন ফোন করেছেন। আপনার কোন পন্য তিনি কিনতে চান। তাই প্রথমেই জানতে চাইলেন দাম কিছু কম রাখা যাবে কি না। আপনি জানালেন- একদাম হলে পন্য বিক্রি করবেন। ক্রেতা বললেন, আমাকে আজই পন্যটি দিতে হবে। আপনি বললেন, হ্যাঁ আজই পন্য পাবেন। কথা শেষ হলো। আপনি যেখান থেকে পন্য এনে দেবার কথা সেখানে ফোন করলেন। তারা জানালো সব পন্য বিক্রি হয়ে গেছে। এখন আপনি কী করবেন? ক্রেতাকে বলবেন সেকথা? তাহলে আপনার ক্রেতা হারানোর ভয় আছে। আবার পন্য না দিতে পারলেও ক্রেতা ক্ষেপে যাবে!
উপরের ঘটনায় আমি দু’টা জায়গা মার্ক করেছি। এক- হ্যাঁ আজই পন্য পাবেন। এটি ছিলো একটি সিদ্ধান্ত। দুই- সব পন্য বিক্রি হয়ে গেছে। এটি একটি নতুন পরিস্থিতি বা সিচুয়েশন যার জন্ম হয়েছে আপনার প্রথম সিদ্ধান্তের পর। এখান থেকেই সহজে বুঝতে পারা যায় সিদ্ধান্ত গ্রহন একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি যা অনুসরণ না করা হলে নতুন অনেক খারাপ পরিস্থিতির আবির্ভাব হতে পারে।
সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত গ্রহনের প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি নিচে কয়েকটি ধাপে দেখানো হলো-
-
পর্যালোচনা করুন
-
অতীতের অভিজ্ঞতা বা তথ্য পর্যালোচনার সাথে জুড়ুন
-
ফলাফল কী হবে তার ছক তৈরী করুন
-
বিকল্প কিছু আছে কি না চোখ বন্ধ করে ভাবুন
-
সিদ্ধান্ত প্রকাশ করুন
পর্যালোচনা করুনঃ যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন সে বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে প্রথম কাজ। যত দ্রুত তথ্যাদি সংগ্রহ করে নিজেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মধ্যে নিয়োজিত করতে হবে। পর্যালোচনায় ছোটখাটো বিষয় যেন বাদ না পড়ে সেদিকে নজর রাখা উচিৎ। তথ্যসমূহ একত্রিত করে মূল তথ্যগুলো সামনে রাখা উচিৎ। উপরের ঘটনায় ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রথম কারন ছিলো ঘটনা পর্যালোচনা বা যাচাই না করে সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা। দ্বিতীয় যে পরিস্থিতি আমরা দেখেছি তা হতো না যদি বলা হতো- আমি স্টক দেখে আপনাকে জানাচ্ছি আজ পন্যটি দেয়া যাবে কি না।
অতীতের অভিজ্ঞতা বা তথ্য যোগ করুনঃ অতীতের তিক্ত কিংবা আরামদায়ক অভিজ্ঞতা হচ্ছে সম্পদ। এর সঠিক ব্যবহার যে কোন সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে। তাই একে সঠিকভাবে নতুন পর্যালোচনার সাথে যোগ করুন। ঘটনা পুরো মনে না থাকলে না যুক্ত করাই উত্তম। তবে সঠিক উপাত্ত তা যত ঐতিহাসিকই হোক না কেন দারুন ভাবে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহনে সাহায্য করে।
কতগুলো সম্ভাব্য ফলাফল চিন্তা করুন, লিখুনঃ সিদ্ধান্ত গ্রহনের ফলে কী কী হতে পারে তার একটা ছক তৈরি করুন। পজিটিভ নেগেটিভ দুটাই ভাবতে পারেন। তবে যদি পজিটিভ বেশি হয় নেগেটিভ কম হয়, সিদ্ধান্ত পজিটিভের দিকেই যাবে। আপনার চিন্তাশক্তি ভাল সিদ্ধান্ত গ্রহনে বড় ভূমিকা নেয়।
বিকল্প আরো কিছু বাদ পড়ছে কি না দেখুনঃ আরো একবার ভাবুন কোন বিকল্প কিছু ফেলে রেখেছেন কি না। অনেক সময় চোখের সামনেই বিকল্প জিনিস পড়ে থাকে তার দিকে চোখ যায় না। তাই চোখ বন্ধ করার আগেও দেখুন, চোখ বন্ধ করেও দেখুন কল্পনার চেম্বারে কিছু থাকলে তা বেরিয়ে আসবে।
সিদ্ধান্ত প্রকাশ করুনঃ সিদ্ধান্ত বেশিরভাগ দ্রুত নিতে হয়। বড় সিদ্ধান্ত অনেকেই একা নিতে ভরসা পান না। তাই অনেকের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেন। সঠিক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নিলে তা বেশি সময় ক্ষেপন করে না। অল্প সময়েই সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। তাছাড়াও সিদ্ধান্তের গুরুত্ব অনুযায়ী তার একটা সময় থাকে। যেমন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত আর পিকনিকে যাবার সিদ্ধান্ত এক রকম নয়। এই দুইয়ে সময়ও এক রকম লাগবে না। এসব দিক বিবেচনা করে যতটুকু দ্রুত সম্ভব সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিন। এই পর্যায়ে আত্মবিশ্বাসের পরিচয় দিন। কথা বলায় স্পষ্ট আর দৃঢ়তার পরিচয় দিন।
সিদ্ধান গ্রহনের পরে কয়েকটি বিষয় মেনে চলুন-
১) সিদ্ধান্ত আপনার ক্ষতির কারন হতে পারে, মেনে নিন।
২) সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার চেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত ভাল হতে পারে, এটাই অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা সব সময় ভাল হয় না। খারাপ অভিজ্ঞতা থেকেই ভাল আশা করা যায়।
৩) নিজেকে দোষারোপ করবেন না। অনেক বড় বড় মানুষ ভুল সিদ্ধান্তও দিয়েছেন আবার সঠিক সিদ্ধান্তও দিয়েছেন।
৪) সিদ্ধান্ত সঠিক হলে ভাবুন কিভাবে তা সঠিক হয়েছিলো? আপনি কতটুকু নিশ্চিত ছিলেন? আর ভুল সিদ্ধান্ত হলেও মিলিয়ে নিন।
৫) সিদ্ধান্ত বেশিরভাগই একটা গেইম বা খেলা। তাই খেলোয়াড়ের মতই সিরিয়াস থাকুন, উপভোগ করুন। হেরে গেলেই সব শেষ নয় কথাটা মনে রাখুন।
মন্তব্যসমূহ