ছোট একটা গল্প দিয়ে শুরুটা করতে হচ্ছে।
আমি কিছু দিন থিয়েটারে গিয়েছিলাম। সময় কাটাবার বিশাল আয়োজন হল থিয়েটার। ভাল লেগেছে বলেই কিছুদিন অনায়াসে যাতায়াত করেছি। একদিন ঘটল এক মজার ঘটনা। থিয়েটার যেখানে হয় সেখানের রুমের চাবি যার কাছে তার আসতে দেরী হবে তাই আমরা সবাই বাইরে বসে আছি। এর মধ্যেই সিনিয়র এক ভদ্রলোক এলেন। তার সাথে একজন পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের মেয়ে ছিল। কথা হচ্ছিল আমার ব্যপারে। কী করেন?
কিভাবে ইনফো এ লিখুন লেখক হয়ে সবাইকে কিছু তথ্য জানান
লেখালেখি করে আপনি জিততে পারেন আকর্ষনীয় পুরষ্কার! বিস্তারিত দেখুন
আমি- খুব ছোট একটা চাকুরী করি , বাইং হাউজে।
লোকটা-তাই নাকি? ভালো , ভালো । সেখানে কী করেন? মানে কী কাজ?
আমি-ফেব্রিক টেস্টিং এসব , কালার ম্যাচিং আর কত কী!
লোকটা- ও আচ্ছা আচ্ছা, কালার – কালার – হ্যাঁ কালারে কী দেখেন? কালার মানে কী জানেন তো?
আমি- মোটামুটি জানি, লাইট রিপ্লেক্ট……
লোকটা আমাকে থামিয়ে দিয়ে- আমি যা বলবো তা কিন্তু , ইয়ে মানে, মনে হয় , হতে পারে এসব দিয়ে বলবো না। আমি যা বলব কনফার্ম করেই বলব। আপনি কি বুঝিয়ে বলতে পারবেন, কালার ব্যপারটা কী?
আমি প্রায় অবাক হলাম আর তাকে কিছুটা থামিয়ে দিয়ে বলার চেষ্টা করলাম, কালার হচ্ছে…
লোকটা- ধমক দিয়ে বলে বসল- জানেন না, তাও বলার ইচ্ছে হচ্ছে- আচ্ছা বলেন তো দুইয়ে দুইয়ে কী হয়?
আমি – চার।
লোকটা- কেন শূন্য হয় না?
আমি এবার থামলাম। এই লোকটা আমার বোকামি ধরে ফেলেছেন। আমি দুইয়ে দুইয়ে চারের বেশি চিন্তা করতে পারি না তাও বলে দিলেন এবং শেষ পর্যন্ত তিনি বোঝালেন তিনি কোন এক সম্মানিত ব্যক্তি ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি তার সাথে আর বেশি বলতেই পারলাম না। উপস্থিত অন্য সবাই আমার বোকামিতে হতাশ হলেন। এবং সেই লোকটা শেষে বললেন, একটু নাড়া দিলাম- যাতে বদলে যান।
আমি বলেছিলাম- থ্যাংকস।
আজ সেই ব্যক্তিত্বের আলাপে এই গল্পটাই মনে পড়ে গেল। ব্যক্তিত্ব এমন জিনিস যে সেটা বেরিয়ে আসবেই। যদি সামাজিক জীবের তালিকায় নিজের নাম লেখাতে চান তাহলে কোন না কোন গ্রেড দিয়ে নিজের ব্যক্তিত্ব প্রবাহ অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।
সূচনা অনেক লম্বা হবার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
কিভাবে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটানো যায়?
আমি আমার ছোট্ট জীবনে ওই গল্পের মত অনেক বার বেকুব বনে গিয়েছিলাম। তার পর যা মনে হল তাহল আমার ব্যক্তিত্ব সেই পর্যায়ের ছিল না। এখনও যে আছে তা বলবো না। এই লেখায় আমি বিখ্যাত কিছু বই এবং জীবনাংশের সহযোগীতা নিয়েছি। তাই আমার প্রসঙ্গ বাদ, আমি এই লেখা লিখছি এজন্যই যাতে আমার মনে থাকে আর আমিও এর চর্চা করতে পারি। তবে চলুন জানা যাক ব্যক্তিত্ব বিকাশের কিছু উপায়।
প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করাঃ
ব্যক্তিত্ব বিষয়টি বোঝার পর এর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারাটা খুব জরুরী। এটা আমার দরকার, লাগবেই। এই যখন মনের অবস্থা তখন সেটা পেয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তাই ব্যক্তিত্ব কী এবং কেন সেটাও জানতে হবে।
ব্যক্তিত্বঃ একজন মানুষ আর একজন অমানুষ এই দুজনের মধ্যে যে প্রথম পার্থক্য তা হল পারসোনালিটি বা ব্যক্তিত্ব। একজন মানুষ আর একজন মহামানুষের মাঝেও তাই। শুধু সাধারণ মানুষ আর ধনী মানুষের মাঝে ব্যক্তিত্ব ছাড়াও আরেকটা ব্যপার থাকে আর তাহল সম্পদ। কিন্তু ব্যক্তিত্ববান মানুষের ব্যক্তিত্বই হল সম্পত্তি। সুতরাং ব্যক্তিত্ব মানে হল ব্যক্তির সেইসব গুন যা তাকে অন্য আরেকজনের থেকে খুব সহজেই আলাদা করে দেয়।
কেন এই ব্যক্তিত্বঃ বিখ্যাত জনেরা বলে গেছেন, যার ব্যক্তিত্ব কিংবা চরিত্ব বলতে কিছু নেই তার মত দরিদ্র আর কেউ নেই। ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ-ই প্রকৃত মানুষ। তাই ব্যক্তিত্ব অর্জনে কঠোর ভূমিকা নিতেই হয়। বিখ্যাত যারা হয়েছেন তাদের সবার ব্যক্তিত্বই অনুসরনীয়। সুখি জীবনের জন্যে ব্যক্তিত্বের বিকাশ না ঘটিয়ে বিকল্প কোন পথ খোলা নেই।
ব্যক্তিত্ব বিকাশে অনুশীলন এর ভূমিকা-
মানুষের পশু প্রবণতা থেকে মার্জিত রূপে আসতে যা যা করতে হয়েছে তার বৃহৎ কাজ ছিল অনুশীলন। আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগেও বেশিরভাগ মানুষ টাকার জন্যে আরেকজন মানুষকে বিক্রি করে দিত। কিন্তু এখন সেটা হয় না। এখন যা হয় তা হলো, সীমিত কিছু মানুষ আছে যারা এখনো পশু থেকে বের হয়ে আসতে পারে নি। তাই অনুশীল্পনের কোন বিকল্প পথ নেই। কিভাবে অনুশীলন করা যায় তা জেনে নিই চলুন-
ব্যক্তিত্ব সুন্দর ও মার্জিত করার মন্ত্র অনেক। সবার আগে যেটাকে গুরুত্ব দিতে হবে তা নিম্নরূপ-
কম কথা বলা- এই বিষয়ে অতি প্রাচীনকাল থেকে দীক্ষা চলে আসছে। কিন্তু কথার কথা হল অনেকই এই মজার ব্যপারটা রপ্ত করতে পারেন না। তাই একে সবচে’ কঠিন বলা যেতে পারে। অথচ এটাই প্রথম হাতিয়ার। যে ব্যক্তি শুধু দরকারি কথা বলেন তাকে সবাই শ্রদ্ধার সাথে দেখেন, ভয় করেন সমীহ করেন। এই লোকের শত্রু হয় কম। কথিত আছে, কথা কম কাজ বেশি।
অন্যের কথা শুনাঃ নিজে না বলে অন্য সবার কথা শুনাই যুক্তিযুক্ত। অন্যরা কে কি বলল, কীভাবে বলল কেন বলল, এসব নিয়ে চিন্তা করা যেতে পারে। কিন্তু অযাচিত কথা বলে নিজেকে হালকা না করার পরামর্শ অনেকেই দিয়েছেন। যখন অন্যের কথা সব শুনা হয়ে যাবে তখন সেই সব লোক ভাববে কী ব্যপার এই লোক কিছুই বলছে না, কেন? এই কেনটাই আপনার জন্য দরকার। এটা আদায় করার মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠে। তবে আড্ডার ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক।
স্বাভাবিক চলাফেরাঃ আপনার সাথে যায় এমন স্বাভাবিক চলাফেরা করা উচিত। অনেকেই ভুল করেন, ভাব নিয়ে ফেলেন অতি উচ্চবিত্তের মতো। ভাই কাক হয়ে ময়ূরের মতো হাঁটলে সবাই তো হাসবে। তাই না? তাই যদি কাঁক হয়ে থাকেন তবে কাঁকের মতো চলুন, রাজ হাঁস কিংবা ময়ূর হতে যাবেন না। সুন্দর ব্যক্তিত্বের মানুষেরা সব যুগেই স্বাভাবিক ছিলেন। তারা চলাফেরায় অস্বাভাবিক হয়ে উঠেন নি কখনো। এক্ষেত্রে আপনার যদি কোন অসুস্থতার কারনে অস্বাভাবিক চলাফেরা করতে হয় মনে রাখবেন সেটাই আপনার স্বাভাবিক। মনেক কষ্ট পাবার কারন নেই। ন্যাচারাল বিষয়কে আপনি নিজেও অবহেলা করবেন না, অন্যকে দেখেও হাসবেন না।
মেজাজের ভারসাম্য রক্ষাঃ একটা কথা মনে রাখবেন, আপনি যে কারনে কারো প্রতি মেজাজ দেখান কিংবা দেখাতে চান এই পৃথিবীর ১০০ভাগ মানুষের সবারি অই একই কারনে মেজাজ খারাপ হয়। কিন্তু খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন যে কিছু মানুষ প্রচণ্ড খারাপ পরিশ্তিতির মাঝেও নীরব থাকতে পারেন। এটাই খেলা। ভারসাম্যের খেলা। যে এই খেলায় যত পারদর্শী সে তত বেশী সুন্দর ব্যক্তিত্ব। তাকে তত বেশি মানুষ শ্রদ্ধা ও সম্মান করে। চরম মেজাজের ফলে ভয়ংকর রূপ যারা নেয় তাদেরকে সবাই ভয় পায়, সম্মান করে না। মন থেকে ভালবাসে না। পরিক্ষিত এটা।
একজনের কথা অন্যজনের কাছে না বলাঃ ব্যক্তিত্বের অনেক গুলো অংশের মাঝে এই বিষয় হচ্ছে খুবই জরুরী। কারো যদি এই বিষয়ে বদভ্যাস থাকে তবে সে শেষ। তার আর কোন গতি নেই। এজন্যই এই গুনের মানুষের সবচে’ বড় সমস্যা হচ্ছে ব্যক্তিত্ব বলে কিছু থাকে না। সমস্যা হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষের এই অভ্যাস কম অথবা বেশি পর্যায়ের থাকে। যে যত বেশি চর্চা করতে পারে সে ততবেশি সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
অন্যের প্রতি সম্মানঃ মানুষ মাত্রই সম্মান পাবার যোগ্য। নিজে সম্মান পেতে হলে অন্যকে সম্মান দিতে হবে আগে। তাই ছোট কিংবা বড়, জ্ঞানী কিংবা মুর্খ এসবের হিসাব না করে সম্মান প্রদর্শন করাই শ্রেয়। কাউকে শালা গালি দিয়ে কটাহ বললে সে কিন্তু মুখ বন্ধ করে রাখবে না। তাই যতদ্রুত পারা যায় এই বিষয়ে আর শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আন্তরিকতা আর মনোভাবের ফলে এই অভ্যাসের পরিবর্তন সম্ভব।
হাসি মুখঃ অনেক রগের জন্য যেমন ঔষধ তেমনি ব্যক্তিত্বের চাবি। বিখ্যাত সব মানুষকে দেখুন কেমন হাসি খুশি।
বাহ্যিক রূপঃ
পোশাকঃ পোশাকের কথা না বললে নয়। একজন মানুষের ভেতরটা দেখার আগে মানুষ দেখে বাইরের আভরণ। সেই আভরণ ঢেকে রাখে পোশাক। কেমন পোশাক পরবেন? যখন যেখানে যাবেন তখন সেই পোশাক পরাই উচিত। অফিসে পার্টি ড্রেস পরা যেমন অনুচিত, তেমনি পার্টিতে অফিসের ড্রেসটাও যায় না। যোগ-বিয়োগ করেই এই বিষয়ে কাজ করুন। তবে পরিষ্কার পোশাক পরলে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। মন ফ্রেশ থাকে।
চুল কাটা, নখ এবং দাড়িঃ এটা খুব কঠিন কিছু নয়। তবু অনেকেই অবহেলা করেন। এই বিষয়ে সজাগ থাকা জরুরী।