নবম শ্রেনীতে যারা উঠবে তারা এখন হয়ত অষ্টম শ্রেনীতে আছো। তাদের মনে একটা প্রশ্ন নিশ্চয়ই প্রতিদিন কৌতুহলী হয়ে উঠছে। আর তা হলো, কোন গ্রুপে পড়বো? বিজ্ঞান নাকি ব্যবসা, অথবা কলা বা আর্টস? নবম শ্রেনীতে গ্রুপ নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে নানান জল্পনা কল্পনা। এর জন্য অভিবাবকদের কাছেও বারবার কথা বলাবলি হচ্ছে। অনেকেই ব্যস্ত হয়ে উঠেছো বাবা মায়ের ইচ্ছা পূরনের জন্য হয়ত বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার প্রস্তুতি। অষ্টম শ্রেনী অর্থাৎ জুনিয়র মাধ্যমিক পাশের পর অবশ্যই যে কোন একটি নির্দিষ্ট গ্রুপ নিয়ে নবম শ্রেনীর ক্লাস শুরু করতে হয়। এক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষকেরা জুড়ে দেন নানান শর্ত। সব শর্ত পূরন করে তবেই নবম শ্রেনীতে গ্রুপ নির্বাচন করে পরের ধাপ শুরু করতে হয়। এর উপর নির্ভর করে অনেক ভবিষ্যৎ। কোন ছাত্র ডাক্তার হবে কে ব্যরিষ্টার হবে তার সব কিছুই এখান থেকে।
তো চলো আরো বিস্তারিত আলাপ করি। তোমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এত আলাপের কী আছে, আমরা বাবা মা যা বলেছে তা ই করবো। হ্যাঁ, অবশ্যই তা ই করবে। তবে তোমার বাবা মা তোমার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে বলছেন নাকি এমনিতেই বলছেন। এমনিতেই যদি বলেন তবে তার জন্যও থাকছে পরামর্শ।
কিভাবে ইনফো এ লিখুন লেখক হয়ে সবাইকে কিছু তথ্য জানান
লেখালেখি করে আপনি জিততে পারেন আকর্ষনীয় পুরষ্কার! বিস্তারিত দেখুন
কিভাবে নবম শ্রেনীতে বিজ্ঞান বিভাগ পছন্দ করতে হয়?
বিজ্ঞান বিভাগ পছন্দ করার জন্য কিছু শর্ত অবশ্যই শুনেছ। গনিতে খুব ভাল রেজাল্ট করতে হবে বিজ্ঞানেও ভাল রেজাল্ট করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এটা অনেকেই বলেন না, বিজ্ঞানের বিষয়গুলো কিংবা ঘটনাগুলো তোমাকে ভাবায় কি না? তুমি বিজ্ঞানের কলকব্জা নিয়ে ভাবতে চাও কি না? মেশিন তোমার কেমন লাগে? কিংবা অজানাকে খুঁজে বের করতে তোমার আগ্রহ কেমন? এসব জানতে চাইলেই তুমি বিজ্ঞানের দিকে এগোতে পারো। বিজ্ঞান পড়েই যে সবাই বিজ্ঞানী হয় তাও কিন্তু নয়। অনেক মানুষই বিজ্ঞান না পড়েও বিজ্ঞানী হয়েছেন। তোমরা হয়ত এর মধ্যেই মাইকেল ফেরাডে’র(Michael Faraday) নাম শুনেছ! তিনি একজন বইয়ের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। অত পড়াশুনা ছিলো না। তিনি আবিষ্কার করেন Electromagnetic induction, diamagnetism and electrolysis. যা তোমরা আজকাল ইলেক্টিক্যাল যন্ত্রপাতিতে পাচ্ছ। এছাড়াও তিনি আবিষ্কার করেন বেনজিন(Benzine C6H6). তেমনি Gregor Mendel এর নাম শুনে থাকবে। তিনিও স্কুল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের কোন ডিগ্রী নিতে পারেন নি। পড়েছেন দর্শন শাস্ত্রে। কিন্তু আবিষ্কার করেছেন জেনেটিক তত্ব। যা তোমরা ডিএনএ হিসেবে জানো। এজন্য তাকে বলা হয় Father of Modern Genetics . আরো অনেকে আছেন যারা স্কুল কলেজের বিজ্ঞান না পড়েও অনেক কিছু করেছেন।
এটা বলার কারন হচ্ছে বিজ্ঞান যদি তোমাকে আকর্ষন করে তোমাকে ভাবায় তাহলে তুমিই বিজ্ঞানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত। ভাবো বিজ্ঞানে আগ্রহ থাকাটা অনেক বেশি জরুরী। এতক্ষন যে দু’জনের কথা শুনেছ তাদের সম্পর্কে তোমার কী ধারনা? তারা কিন্তু অনেক গবেষনা করে তবেই এসব আবিষ্কার করেছেন। গবেষনা করার ইচ্ছা থাকলে কিংবা তোমার ভেতরে বিজ্ঞানকে ভালবাসতে পারলে অবশ্যই তুমি গনিতে এবং বিজ্ঞানের ফিজিক্স, কেমিষ্ট্রি, বায়োলজিতে মনোযোগী হও। ইংরেজি শেখা তোমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে গ্লোবাল বিজ্ঞানের দিকে। তুমি সহজেই বুঝতে পারবে বড়বড় বিজ্ঞানীদের লেখা বই। মনে রেখো, পৃথিবীতে তোমার মত বিজ্ঞান প্রেমীর অনেক প্রয়োজন। মা বাবা কী বলেছেন তা শুনে তাদেরকে এভাবেই বোঝাতে পারো।
নবম শ্রেনীতে বানিজ্য বিভাগ পছন্দ করবে কেন?
বানিজ্য বিভাগ কারা পছন্দ করবে এজন্যই যে তুমি অনেক বেশি বিচক্ষণ আর চারদিকের খোঁজ খবরে তোমার আগ্রহ বেশি। বানিজ্য আর অর্থ এর মধ্যেই হচ্ছেই যত কাজ। অর্থ লেনদেন কিংবা কারবার বা কোম্পানীর মালিক হবার স্বপ্ন তোমাকে নিয়ে যাবে বানিজ্যের দিকেই। বানিজ্য বিভাগে তুমি শুধু খারাপ রেজাল্ট করেছ বলে পছন্দ করবে না। তুমি একটা ভাল পরিকল্পনা নিয়েই এই বিভাবে যাবে। বানিজ্য গ্রুপের পড়া বিজ্ঞানের মত কঠিন না হলেও খুব সহজ কিন্তু না। অনেক হিসাব নিকাশ করতে হয়।
অনেক ছাত্ররাই বানিজ্য পড়ার সিদ্ধান্ত নেয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে বা পরে। অনেকেই অনার্সে গিয়ে নিজের অবস্থান বদলায়। বুঝতে পারে তার জন্য বানিজ্য বিভাগই হচ্ছে আসল জায়গা। এতদিন পরে বুঝতে পারলেও ভাল। কিন্তু আরো ভাল হয় যদি জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জে এস সি) এর পরেই সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। তা করতে পারলে নবম শ্রেনী থেকেই পড়া শুরু করা যায়। কষ্ট যা হবার তা এখান থেকেই হয়ে যায়।
অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী বর্তমানে আছেন যারা বানিজ্য বিভাগে ডিগ্রী নিতেও পারেন নি অথচ কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা হয়েছেন। এদিকে আমাদের দেশের ডক্টর ইউনুসের কথা সবার আগে বলতে হয় যিনি অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেন এবং ক্ষুদ্রঋন প্রকল্প চালু করেন। শান্তিতে তিনি নোবেল পুরষ্কার অর্জন করেন। তিনিই প্রথম এবং এ পর্যন্ত একমাত্র বাংলাদেশী যিনি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।
নবম শ্রেনীতে কলা বা আর্টস বিভাগ পছন্দ করার কারন কী কী?
যারা সত্যিকারের ক্রিয়েটিভ কিছু করতে চাও তাদের জন্য কলা বিভাগ খুবই ভাল পছন্দ। কলা বিভাগ পড়ার কারনে তুমি অনেক কিছুতেই নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারো। আইন পেশায় কিংবা সাংবাদিকতা পেশায় অথবা সাহিত্য চর্চায় কলা বিভাগের ছাত্রদের কাজে লাগবে। এর কোনটাও যদি তোমার ভাল লাগার হয়ে থাকে তবে তুমি কলা বিভাগ নিয়ে আরো ভাবো। পড়ে দেখ কলা বিভাগের বিষয়গুলো কেমন বর্নাত্মক। জানার জন্য শেখার জন্য কলা বিভাগ মানব জীবনের আচার আচরণ কিংবা জীবন পদ্ধতির দিকে টেনে নেবে। মানুষের সাথে বেশি কাজ করার ক্ষমতা থাকবে এই বিভাগে পড়ুয়াদের।
কলা বিভাগের ছাত্ররা বিজ্ঞান বিভাগের মত কঠিন পড়া না পড়লেও তারা পছন্দকৃত বিষয়গুলো থেকে রসবোধ কিংবা জীবনবোধ শিখতে পারে। অনেকেই কলা বিভাগ পড়ে জীবনে উন্নতি করেছেন। এক সময়ে আমেরিকান এক্সপ্রেস এর সিইও এবং আইবিএম এর ডিরেক্টর হয়েছেন Ken Chenault তিনি দর্শন পড়েছেন। তার কলা বিভাগের পড়াশোনা ছিলো। এছাড়াও গ্রেগর মেন্ডেল এর কথা কিছুক্ষন আগেই এখানে পড়েছো। তিনিও অনেক বড় বিজ্ঞানী, পড়াশোনা দর্শন শাস্ত্রে।
আশাকরি তোমরা তোমাদের নিজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কখনোই কারো কথায় কান দিয়ে নিজের জন্য দুঃখ ডেকে আনা ঠিক হবে না। পরিশ্রম কর, পড় তবে তোমার পচন্দে। কোন বিভাগই ছোট নয় কিংবা কোন বিভাগ/গ্রুপ কম গুরুত্বপূর্ন নয়। বিজ্ঞান পড়ুয়া ডাক্তার চাকরি করছেন আর্টস পড়ুয়া কোন এক বিখ্যাত সেলিব্রিটির বাড়ির বা ফ্যামিলী ডাক্তার হিসেবে। এরকম অনেক উদাহরন আছে যাতে করে বোঝা যায় কেউই ছোট নয়, কারোরই সেরা হবার রাস্তা বন্ধ নয়। সব কিছু উন্মুক্ত।
মন্তব্যসমূহ