রাতে বিছানায় প্রস্রাব করা শিশুদের নিয়ে বাবা মা নানান ধরনের সমস্যায় ভোগেন। অনেকেই শিশুদের নানান ভাবে নির্যাতনও করেন। বাবা মায়ের ধৈর্য্য হারানোর কারন হলো বিছানা নোংরা করার পর তার আবার শুকানো কিংবা পরিষ্কার করার যন্ত্রণা অনেক। কিন্ত শিশুরা কেন রাতে বিছানায় প্রস্রাব করে তার কারন জানা দরকার এবং সে অনুযায়ী তাদের সেবা করা উচিৎ। আজ তাই আপনাদের জন্য কিছু ধারনা নিয়ে এসেছি, কিভাবে বিছানায় প্রস্রাব করা শিশুর যত্ন নিবেন? চলুন জানা যাক।
শিশুরা ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে কেন?
যেসব শিশুরা গভীর নিদ্রাচ্ছন্ন থাকে, কিংবা যাদের ব্ল্যাডার কন্ট্রোল করার অভ্যাস তৈরী হয় নি। অথবা কারো যদি ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড যেমন বাবা মা, চাচা মামা, খালা ফুফু এদের মধ্যে এই ধরনের কোন হিস্ট্রি থাকে তবে শিশুদের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব দেখা যায়। অনেকের মতে নানান ধরনের স্ট্রেস, যেমন নতুন ভাই বোন জন্মালে, কিংবা ভীত সন্ত্রস্ত থাকলেও এমন হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে কিংবা প্রচুর পরিমানে পানি খেয়ে ঘুমালেও এমন ব্যপার ঘটতে পারে।
কিভাবে ইনফো এ লিখুন লেখক হয়ে সবাইকে কিছু তথ্য জানান
লেখালেখি করে আপনি জিততে পারেন আকর্ষনীয় পুরষ্কার! বিস্তারিত দেখুন
ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করা শিশুদের ক্ষেত্রে খুবই সাধারন ঘটনা। প্রত্যেক শিশুই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে। পাঁচ থেকে ছয় বছরের পরে বেশিরভাগ শিশুরই ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করার প্রবণতা কমে যায়। এই হার বিভিন্ন রকমের হয়।
ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করা কি কোন রোগ?
এতক্ষণে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করা কোন রোগ নয়। তবে যদি আপনার শিশু ৬ মাসের মধ্যে কখনোই ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব না করেন কিন্তু তারপরে হঠাৎ করে ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করলে তা ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ। কিন্তু যদি ৬ মাসের মধ্যে এ ঘটনা কয়েকবার ঘটে তবে তা স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিতে হবে।
কত বয়স পর্যন্ত শিশু ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে?
পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই প্রায় শতকরা ৮৫ভাগ শিশুর ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করার প্রবণতা বন্ধ হয়। ১৫ভাগ তখনো ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে।
আট বছর বয়সের পরেও শতকরা ৬ থেকে ৮ ভাগ শিশু ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে।
টিনেজ বা কিশোর বয়স প্রায় ১৫ বছর পর্যন্ত শতকরা ২ ভাগ শিশু কিশোর ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে।
ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করা শিশুর জন্য কী যত্ন নিবেন?
এতক্ষণ যা বললাম, ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করা কোন রোগ নয়। তারপরেও কিছু বাড়তি যত্ন নিতে পারেন। শিশুদের জন্য বাবা মায়ের সাহায্য খুবই দরকারি। যদি ভুলেও গাল মন্দ করে থাকেন তা ভুল করেছেন। এখন থেকে আপনি আরো দক্ষতার সাথে তার ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করার প্রবণতাকে মোকাবেলা করতে পারেন।
কী কী করতে পারেন?
১। খেয়াল রাখুন ঘুমের আগে যেন আপনার শিশু প্রচুর পরিমানে তরল খাবার না খায়।
২। ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখুন
৩। ঘুমাতে যাওয়ার আগে তাকে প্রস্রাব করিয়ে নিন।
৪। রাতের বেলা ওয়াশরুমে যাবার সহজ ব্যবস্থা করুন। ডিম লাইট জ্বালিয়ে রাখুন যেন সে খুব সহজে ওয়াশরুমে যেতে পারে।
৫। একটা ভাল মানের প্লাস্টিক বেড কভার ব্যবহার করুন। একটা ভারী টাওয়েল দিয়ে দিতে পারেন তার উপর যেন টাওয়েল ভেজা অবস্থা থেকে শুকিয়ে নিতে পারে। শিশুর বয়স কম হলেও তাকে ট্রেইনিং প্যান্ট দিতে পারেন, ডায়াপার ব্যবহার না করাই ভাল।
৬। শিশু বিছানায় প্রস্রাব করলেও তাকে জাগাবেন না, যদি সে না জাগে। ভেজা পাজামা পরে ঘুমালে তেমন ক্ষতি হয় না, তবে একটা টাওয়ে দিয়ে দিতে পারেন যা ভেজা অবস্থা থেকে শুকিয়ে নিতে সাহায্য করবে। যদি শিশুর সর্দি কাশি নিয়ে আগে কখনো সমস্যা হয়ে থাকে তবে তাকে ঘুম থেকে না জাগিয়ে ভেজা কাপড় বদলে দিতে পারেন।
৭। যদি আপনার শিশু ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে তবে তাকে সকালে ঘুম থেকে উঠার পর সাহায্য করুন। কোন বিদ্রুপ করবেন না। তার মানসিকতায় আপনি কোন নিরুৎসাহী ভূমিকা রাখবেন না। যে যদি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে তাকে স্বান্তনা দিন। বিভিন্ন আইডিয়া দিতে পারেন, কিভাবে সে ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করা নিয়ন্ত্রন করতে পারে।
ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করা শিশুকে কখন ডাক্তারের কাছে নিবেন?
আপনার শিশুকে বিছানায় প্রস্রাব করার জন্য ডাক্তারের কাছে নেওয়া আবশ্যিক না। কিন্তু যদি সে –
১। যদি শিশু দিনের বেলাতেও একই রকম ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করে
২। যদি শিশু খুবই হতাশা বোধ করেন, নিজেকে নিয়ে খুবই লজ্জিত হয়।
৩। শিশুর যদি ৬ মাসেও এমন না হয়ে হঠাৎ ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে।
৪। যদি সে খুব বেশি বেশি প্রস্রাব করে, এছাড়াও অন্যান্য কোন লক্ষণ দেখা দেয়।
এমন ক্ষেত্রে আপনার শিশুকে ডাক্তারের সাথে দেখা করান।