বারান্দা যত ছোটোই হোক আর বড়ই হোক এখানে সবজি বাগান করা যেতে পারে। শুধু দরকার সঠিক প্ল্যান আর বাস্তবায়ন। যাদের বাগান করা শখ তারা এই বিষয়ে এগিয়ে আসতে পারেন। এটা দু’দিক থেকেই সহায়ক, এক-সব্জির কিছুটা চাহিদা মেটানো, দুই- বাগান করায় মানসিক সন্তুষ্টি অর্জন।বারান্দায় সবজি বাগান করে অনেকেই নিজেদের প্রয়োজনীয় সব্জির চাহিদা কিছুটা কমিয়ে এনেছেন। পছন্দের সবজি বাগান করা গেলে অর্গানিক সবজি পাওয়া সম্ভব, বাইরের দুষিত সবজি না খাওয়াই ভাল।
আসুন জেনে নেই কিভাবে বারান্দায় সবজি বাগান করা যায়-
কিভাবে ইনফো এ লিখুন লেখক হয়ে সবাইকে কিছু তথ্য জানান
লেখালেখি করে আপনি জিততে পারেন আকর্ষনীয় পুরষ্কার! বিস্তারিত দেখুন
পরিকল্পনা গ্রহনঃ বারান্দায় সবজি বাগান করার জন্য একটি সুন্দর পরিকল্পনা দরকার। এজন্য প্রথমেই বারান্দার সাইজ বা আয়তন মেপে দেখা দরকার। যদি বারান্দা খুব ছোট আয়তনের হয় তবে তার জন্য খুব ছোট পরিকল্পনা করতে হবে। ছোট পরিমানের গাছপালা চিন্তা করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বাজেটের পরিমান নির্ধারন করতে হবে বাগানের আয়তনের উপর।
বাগান পদ্ধতি নির্বাচনঃ সবজি বাগান কোন পদ্ধতিতে করবেন তা নির্ধারন করতে হবে। টবে করবেন নাকি ট্রে তে করবেন? বারান্দার সবজি বাগান করার জন্য ট্রে কিংবা সিঁড়ি পদ্ধতি অবেক ভাল। ট্রে তে অনেক বেশি ছোট আকারের গাছ জন্মানো কিংবা বড় করা যেতে পারে। ছোট সবজি হলে তা ট্রে তেই ভাল হবে। আবার বড় সাইজের গাছ হলে ট্রে তে মাটির গভীরতা অনেক বেশি দরকার হয়। সেটা টবেই ভাল। তাই গাছের বা সব্জির সাইজের উপর নির্ভর করে সবজি বাগানের পদ্ধতি গ্রহন করা উচিৎ।
সবজি নির্বাচনঃ কোন কোন সবজি চাষে আপনি আগ্রহী তা একটি জরুরী বিষয়। এরকম হাজারো সবজি আছে যার একেকটি একেক ভাবে চাষ করতে হয়। শুরুতেই এমন কিছু সবজি নির্বাচন করতে হবে যা খুব সহজেই অল্প পরিশ্রমে চাষ করা যায় । কঠিন কিছু শুরুতেই অন্তর্ভুক্ত করা ঠিক নয়। মনে রাখবেন এই বাগান আসলেই অর্থকরী কিছু নয়, শুরু করছেন শখের খেয়ালে। তবে একসময় এখান থেকে কিছু আয় হবে এটা নিশ্চিত। তাই শুরুতে যেটা করা যায়, বারমাসি সবজি, শীতকালীন কিছু সবজি, অথবা শাক যেমন পুঁই শাক, ডাঁটা শাক। টমেটো, মুলা, গাজর, লাল শাক মরিচ, ধনে পাতা, পেঁইয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়া, কছু ইত্যাদি চাষ্ করে দেখা যেতে পারে।
বাজেট নির্ধারনঃ এবার বাজেট নির্বাচন। বাজেটের বেলায় খুব হিসেবে হতে হবে। দরকারের চেয়ে বেশি পরিমানে চারা বীজ কেনা যাবে না। সার, মাটি/কম্পোষ্ট, টব, অথবা ট্রে, এসব কেনার ব্যাপারে একটা ভাল নিরীক্ষা চালানো যেতে পারে। টব অথবা ট্রে-র বেলায় বাসায় অব্যবহৃত প্লাস্টিক, বোতল, বালতি, ট্রে এসব ব্যবহার করা যেতে পারে। বাশের চোংগ দিয়েও কিছু ট্রে টাইপ বানিয়ে নিতে পারবেন। মাটির জন্য আশপাশের নার্সারীতে কম্পোস্ট মিশ্রিত মাটি পাওয়া যায়। তার সাহায্যে শুরুটা করতে পারেন। সাধারনত ১০০টাকার কম্পোষ্ট মিশ্রিত মাটিতে কয়েক ট্রে ভরে ফেলা যায়। গাছের চারা ছাড়া আর তেমন কিছুই কিনতে হয় না। তাই বাজেট খুব বেশি লাগে না।
বারান্দায় সবজি বাগান তৈরীঃ সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেলার পর যা বাকি থাকল তা হলো শুরু করা।
একটু সময় নিয়ে কাজ শুরু করা উচিৎ। ছুটির দিন হচ্ছে সবচে’ সুবিধাজনক দিন। তাই শুরুতেই বেইজ নির্ধারন করতে হবে।ট্রে অথবা টবে মাটি ভরাট করে দিতে হবে।
গাছের চারার জন্য নার্সারী ঘুরে উন্নত বীজ অথবা চারা সংগ্রহ করতে হবে।সুস্থ্য চারার উৎপাদন ভাল হয়। চারা রোপনের পর তা সঠিক স্থানে সংরক্ষন করার, টব বা ট্রে গুলোকে সঠিক স্থানে সাজানো, আবার বাতাসের কারনে কিংবা ঝড়ের বাতাসে যেন উড়ে পড়ে না যায়। টব বা ট্রে সাজানোর সময় মাঝামাঝিতে একটি হাঁটা চলার পথ রেখে দিতে হয়। গাছের কাছে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকা আবশ্যিক।
একটি ট্রের উপর আরেকটি ট্রে সাজানো গেলে অল্প জায়গায় অনেক বেশি উতপাদন সম্ভব।
পরিচর্যা বা রক্ষনাবেক্ষনঃ যে কোন বাগান তৈরী করে ফেলাই শেষ নয়। এর জন্য প্রতিদিন পরিচর্যার আয়োজন রাখতে হয়। তাই ডেইলি বেসিস পরচর্যা আবশ্যক। পানি দেয়া, মাটি দেয়া কিংবা আগাছা থাকলে পরিষ্কার করা, সার দেয়া, কম্পোষ্ট দিলেই সবচে’ ভাল। চারা ঘন হয়ে গেলে তা পাতলা করে দিতে হয়। কিছু চারা তুলে নিয়ে অন্যত্র রোপন করা যেতে পারে। স্বল্পমেয়াদি সবজি হলে তা দ্রুত খাবার উপযোগী হয়। সবজি বাগানে পোকামাকড়ের উপদ্রব পর্যবেক্ষন করতে হয়।
মাটি ছাড়াও সবজি বাগান করা যায়। আধুনীক গাবেষনা এরকম কিছু পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছেন।সেই পদ্ধতিতে উন্নত কিছু কম্পোষ্ট আর পাথরের নুড়ি দিয়েই সবজি বা ফলের চাষ করা যায়। এই পদ্ধতির সুবিধা হচ্ছে পোকা মাকড়ের আক্রমন একেবারেই কম হয়।
বারান্দায় কিংবা ছাদে ফলের বাগান কিংবা সবজির বাগান করে ফ্রেশ সজীবতার কাছাকাছি থাকা যায়। সময় কাটানোর জন্য বারান্দার এই বাগানই সহায়ক হতে পারে।
মন্তব্যসমূহ